এক সময় ভোগবিলাসের জীবন আর অভিজাত শ্রেণি থেকে উঠে আসলেও ক্যারিশমাটিক গুণাবলি, ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় এবং ধর্মের প্রতি সাম্প্রতিক অনুরাগ দিয়ে দেশের ভেতর দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ইমরান খান। এত জনপ্রিয়তা নিয়েও বর্তমানে লাহোরে নিজের বাসভবন জামান পার্কে একঘরে হয়ে আছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে তাঁর দলের নেতা কর্মীরাও এখন ফেরারি। চলতি মাসের শুরুর দিকে ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে সামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছিল তার দল পিটিআই-এর সমর্থকেরা। শেষ পর্যন্ত ইমরান মুক্তি পেলেও পিটিআই সমর্থকদের ওপর এখন ধর-পাকড় চলছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। দলটির নামকরা বেশ কয়েকজন নেতাও এখন জেলে, আর এক সপ্তাহের মধ্যেই দল থেকে ২ ডজনের বেশি নেতা পদত্যাগ করেছেন। সেনাবাহিনী আর সরকার ঘোষণা করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টে জড়িত যে কোনো ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতীতে পাকিস্তানি জেনারেলদের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দেশটির যেসব প্রধানমন্ত্রী জেলে গিয়েছেন, নির্বাসিত হয়েছেন কিংবা মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন-ইমরান খানেরও তেমন পরিস্থিতিতে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। স্বাধীনতার পর পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটিকে বেশির ভাগ সময় সেনাবাহিনীই নিয়ন্ত্রণ করেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিয়ে দীর্ঘ বছর গবেষণা করা লন্ডনের কিংস কলেজের বিশেষজ্ঞ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘ইমরান খানের রাস্তা এখন শেষ হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো-সেনাবাহিনী কি পারবে তার সমর্থনের ভিতকেও নিশ্চিহ্ন করে দিতে?’ বর্তমানে বাইরের বিশ্বের সঙ্গেও ইমরানের যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বুধবার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ আইন প্রণেতাদের সঙ্গে একটি পূর্ব নির্ধারিত ফোনালাপের আগে তাঁর বাসভবনে ইন্টারনেট হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ইমরান ও তার স্ত্রীসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর আগে চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট ও সহিংসতার অভিযোগে পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে সরকার। এ অবস্থায় ইমরানের গলার সুরও নরম হয়ে আসে। সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনারও প্রস্তাব দেন এবং জানান, ক্ষমতায় থাকা যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করতে প্রস্তুত তিনি। হঠাৎ করে ইমরানের এমন সমঝোতার সুরকে তাঁর দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া ইমরানের সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সেনাবাহিনীও জনসাধারণের কাছ থেকে কিছুটা সহমর্মিতা আদায় করে নিয়েছে। এ অবস্থায় মনে হচ্ছে, দেশটির অতীত নেতাদের মতোই করুণ পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছেন ইমরান খান! কিন্তু বিপুল জনপ্রিয় ইমরানের এমন অবস্থায় আসার শুরুটা হয়েছিল কীভাবে? ধারণা করা হয়, ২০১৮ সালে পাকিস্তানে ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক সেই ধারণাকে আরও পাকাপোক্ত করে। কিন্তু ২০২১ সালেই এসেই বদলে যায় পরিস্থিতি। পাক জেনারেলদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকাবিরোধী নীতির সূত্র ধরেই পাক জেনারেলদের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। সেই সময়টিতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ওপর জোর দিয়েছিলেন ইমরান। শুধু তাই নয়, সেনা কর্মকর্তাদের পদোন্নতিও নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর এমন প্রচেষ্টা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সে সময় তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার প্রধানের পদে তৎকালীন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার পছন্দের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছিলেন এবং নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে এ পদে বসাতে চেয়েছিলেন। এ সব ঘটনাই ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বীজ বপন করেছিল। ধারণা করা হয়, ইমরানের আমেরিকাবিরোধী মনোভব এবং বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যই পাকিস্তানের সামরিক তন্ত্র জেনারেল আসিম মুনিরকে দেশটির সেনাপ্রধান করেছে। এই আসিম মুনিরকেই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ইমরান। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্যও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ক্ষমতার লোভকেই প্রকাশ্যে দায়ী করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ১৯৩০-এর দশকে হিটলারের উত্থানের সঙ্গে আসিম মুনিরের উত্থানকে তুলনা করেছেন। ওয়াশিংটনের ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনের গবেষক মাধিহা আফজাল বলেন, ‘ইতিহাস যদি সেনাবাহিনীর ইচ্ছায় আবার ঘুরে আসে-তবে এটি ইমরান খান, তার দল এবং পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য মোটেও ভালো কিছু হবে না।’ awesome)
Check Also
এই জয় তুরস্কের সাড়ে আট কোটি নাগরিকের: এরদোয়ান
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বিজয়ের পর দেশের সব নাগরিককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বিজয় …