রায়হান যখন স্কুলের ছাত্র তখন ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে তার দুই হাত ঝলসে যায়। সেই থেকে এক হাত নেই, আরেক হাত আছে কনুই পর্যন্ত। হাত হারিয়েও দমে যাননি রায়হান। অদম্য এই তরুণ মুখ দিয়ে লিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। স্নাতকোত্তরে জিপিএ ৪-এর মধ্যে পেয়েছেন ৩.১৩।
যুগান্তরের মাল্টিমিডিয়া বিভাগে সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে চাকরি পেয়েছেন দুই হাত হারানো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাহার উদ্দিন রায়হান। সোমবার আইসিটি বিভাগের এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রকল্পের ‘প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক’ পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতেচাকরি পাওয়ার যুগান্তরকে জানিয়েছেন তার আনন্দানুভূতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সীরাত মঞ্জুর
যুগান্তর: আপনি কীভাবে চাকরি পেলেন?
রায়হান: সম্প্রতি যুগান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে করা নিউজগুলো পাওয়ার মন্ত্রণালয় থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরে আমার কাজ, অভিজ্ঞতা, সিভি এসব দেখেছে। ওরা হয় তো চিন্তা করেছে- ওকে এই জায়গায় দিলে ভাল হয়। দেখা করার পর ওরা আমার নিয়োগ রেডি করল৷ পরে আজকে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমের জুনায়েদ আহমদ পলক স্যার নিজেই আমাকে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন৷
যুগান্তর: চাকরি পাওয়ার পর এখন কেমন লাগছে?
রায়হান:অনুভূতি কেমন সেটি বলে ভাষায় বুঝাতে পারব না। আমি সবার কাছে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞ। আমার সরকারি চাকরি হবে সেটা আমি চিন্তাও করিনি। তবে এখন বেসরকারি দুটি চাকরির অফার আটকে আছে৷ ওদেরকে আমি এখন বলে দেব যে, আমার এইখানে চাকরি হয়ে গেছে।
যুগান্তর: আপনার চাকরি হওয়ার খবর শোনার পর আপনার মায়ের অনুভূতি কেমন হয়েছিল?
রায়হান: মাকে তো আমি ফোনে জানিয়েছিলাম কেমন করেছেন দেখিনি, তবে তিনি এটি শোনে ভাষাহীন হয়ে গেছেন৷ এছাড়া আমার নানার বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয়েছে।
যুগান্তর: চাকরি পাওয়ার এখন প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশে কী বলবেন?
রায়হান: আমার মতো যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের আমি এটিই বলবো যে, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, স্কিল (দক্ষতা) তৈরি করুন, শক্ত হয়ে কথা বলুন, মনমরা হবেন না। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে পড়ালেখা করে যান একটা নন একটা কিছু হয়ে যাবে৷ আর আমি তো সেন্ট্রালি আছি, আমিও আমার সাধ্যমত দেখবো।
যুগান্তর: আমাদেরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন চাকরি পাওয়ার পর বেকারদের নিয়ে কাজ করবেন। এখন আপনার পরিকল্পনা কী?
রায়হান:আমি আগে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই, হয়তো এক বছর লাগবে। এর পর ধীরে ধীরে নিজে একটি এনজিওর চিন্তা ভাবনা করবো। অবশ্যই সেটির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার একটি বিষয় আছে। আমি কতটুকু পারছি সেটির ওপর নির্ভর করে দেখা যাবে৷ আগে চাকরিটা শুরু করি।
যুগান্তর: কখন চাকরিতে যোগ দেবেন?
রায়হান: ইনশাআল্লাহ! আমি আগামী (জুন) মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে চাকরিতে যোগ দেব।
যুগান্তর:সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
রায়হান:আপনাকেও ধন্যবাদ। যুগান্তরের সব পাঠকদের ধন্যবাদ।
amazing)