গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া ঈদ বোনাস ও বেতন ভাতার দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শ্রমিকদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় ছুটাছুটি করে ছত্রভঙ্গ হযে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার গুদাম ও শিল্প পুলিশের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ভাংচুর করেছে।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ডার্ড কম্পোজিট কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ধলাদিয়া গ্রামে অবস্থিত ডার্ড কম্পোজিট কারখানার শ্রমিকেরা গত ঈদের বোনাস এবং বকেয়া বেতনের দাবীতে গত শনিবার সকাল থেকে কারখানার গেটে আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ সাড়ে ৬টার আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ঢাকা কাপাসিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। মালিক এসে রবিবার ১৪ মে এর সমাধান দিবেন মর্মে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিত করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা।
মালিক রোববার ১৪মে সকালে আসার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত মালিক কারখানায় উপস্থিত না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং কারখানার ভিতর বিক্ষোভ করতে থাকে।
খবর পেয়ে মালিক সাড়ে ৩টায় কারখানায় এসে উপস্থিত হন এবং কয়েকজন শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সন্ধ্যা নাগাদ কোনো প্রকার সুরাহা না হওয়ায় কারখানার সকল শ্রমিক একসাথে মিলে তারা আবার শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার ভিতরে অবস্থান করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ হঠাৎ করে শ্রমিকদের ওপর রাবার বুলেট লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বহু শ্রমিক আহত হয়।
এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের ব্যবহৃত ডাবল কেবিনের গাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করলে ফায়ার সার্ভিস আসার পূর্বেই গাড়িটি সম্পূর্ণ বশীভূত হয়ে যায়। এছাড়াও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানার পাশে একটি তুলার গোডাউনে অগ্নিসংযোগ করে।
কারখানার শ্রমিক সুইং অপারেটর চম্পা আক্তার বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কারখানা মালিক কারখানায় উপস্থিত হয়ে আমাদের শ্রমিক নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসে। দীর্ঘ আলোচনায় কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। এরপর আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ রাবার বুলেট, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমরা ছুটাছুটি করে বের হতে যেয়ে অনেকেই আহত হই।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, আলোচনা চলাকালে হঠাৎ করেই শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আল মামুন বলেন, বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ৪১জন শ্রমিক প্রতিনিধি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা, শিল্প পুলিশের সদস্য থানা পুলিশের সদস্য উপজেলা প্রশাসনের সদস্যদের নিয়ে কারখানার চর্তুথ তলায় আলোচনা চলছিলো, হঠাৎ করে নিচে অবস্থান নেয়া শ্রমিকরা কারখানার দরজা জানালার গ্লাস ভাংচুর চালায়। এসময় পুলিশ নিরাপত্তা জন্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এরপর শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বের হয়ে শিল্প পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যুগান্তরকে জানান, শ্বিক্ষোভ শ্রমিকেরা পুলিশের গাড়িতে এবং কারখানার একটি তুলার গোডাউনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাই এ ঘটনায় তাদের নামে পৃথক দুটি মামলা হবে।
খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ঘটনাস্হল পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শন শেষে তিনি যুগান্তরকে জানান, আন্দোলনরত শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে দেশবিরোধী একটি চক্র পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর, এবং তুলার গোডাউনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরো জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, কারখানাটি আপাদত বন্ধ থাকবে, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসলে কারখানাটি খুলে দেওয়া হবে এমন শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করে দেওয়া হবে।
Great)