পটুয়াখালীরবাউফলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারে মৃত্যু হয় আখিনুর বেগম (১৯) নামে এক গৃহবধূর। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনা গোপন করে তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন পরিবারকে। এরপর গা-ঢাকা দেন ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাহাদুর বয়াতির স্ত্রী মৃত আখিনুর বেগম। প্রসবজনিত কারণে রোববার বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় আখিনুর। আখিনুরের পরিবার এমন অভিযোগ করেছেন। এর পূর্বেও ওই ক্লিনিকে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ভিকটিমের স্বামী বাহাদুর বয়াতি বলেন- প্রসবজনিত কারণে রোববার সকালে আখিনুর বেগমকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত নার্স নরমাল ডেলিভারি করাতে যথাযথ উদ্যোগ নেন। এ সময় দালাল চক্র ও এক নার্স আখিনুরের পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে সিজারিয়ান করাতে বলেন। এতে তারা শঙ্কিত হয়ে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়ে ওই ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করান প্রসূতিকে। ওই দিন সন্ধ্যায় সিজারিয়ান অপারেশন করাতে আখিনুরকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয়। ডাক্তার সোলায়মানের অস্ত্রোপচারে আখিনুর একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
এরপর নির্ধারিত সময়ে আখিনুরের জ্ঞান না ফিরলে ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে অন্য জটিলতা দেখিয়ে আখিনুরকে উন্নত চিকিৎসা করাতে বরিশাল শেবাচিমে নিতে বলেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আখিনুরকে তাদের ক্লিনিক থেকে বের করতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দেন বলে জানান তার স্বামী ও পরিবার।
রাত ৮টার দিকে আখিনুরের মৃতদেহ নিয়ে বরিশাল শেবাচিমে রওনা হন তারা। পৌনে ১০টার দিকে বরিশাল শেবাচিমের জরুরি বিভাগে পৌঁছলে সেখানকার ডাক্তার তাদের জানান- অনেক আগেই আখিনুরের মৃত্যু হয়েছে। পরে আখিনুরের মৃত্যুর বিষয়টি বাউফলে ছড়িয়ে গেলে উপজেলা চত্বরে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্লিনিকে তালা লাগিয়ে গা-ঢাকা দেন তারা।
অভিযুক্ত সেবা ক্লিনিকের একটি সূত্র জানায়, মালিক মিলন অপারেশন থিয়েটারে নিজেই অখিনুরের শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করেছেন। সঠিক পদ্ধতি ও অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার দ্বারা রোগীর শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ না করায় মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ডাক্তার।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সেবা ক্লিনিকের মালিক মো. মিলন বলেন, আমি রোগীর শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করিনি। তাছাড়া ওই দিন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাকে অহেতুক জড়ানো হচ্ছে।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে সেবা ক্লিনিকের নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এসএম কবির হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ আরিচুল হক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য আখিনুরের মৃতদেহ পটুয়াখালী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
awesome)