দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকে বিজেপির জয়রথ থামিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। শনিবার অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে দলটি ২২৪টি আসনের মধ্যে ১৩৬ টিতে জয়লাভ করে এককভাবে রাজ্য সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। কংগ্রেসের এই জয়ের পেছনে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে তিনিই রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ডিকে শিবকুমার। বিভিন্ন সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় কংগ্রেসের ‘ট্রাবল শুটার’ বা বিপদের বন্ধু হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, বিজয় নিশ্চিত করার পর কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়েও এগিয়ে আছেন ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের এই নেতা। জানা গেছে, ৮০’ র দশকে ছাত্র থাকা অবস্থায়ই কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন কর্নাটকের কনকপুরায় জন্ম নেয়া শিবকুমার। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দলের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। বর্তমানে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, মাত্র ২৭ বছর বয়সে জীবনের প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েই জয়লাভ করেছিলেন শিবকুমার। ১৯৮৯ সালে কর্নাটক বিধানসভার সেই নির্বাচনে মহীশূরের সতনুর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪,১৯৯৯ ও ২০০৪ সালেও একই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন তিনি। ২০০৮ সালে কেন্দ্র পরিবর্তন করে নিজের জন্মস্থান কনকপুরা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জয় পান শিবকুমার। এরপর ২০১৩ ও ২০১৮ সালেও একই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন তিনি।সর্বশেষ এবারের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থীকে ১ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করলেন। নিজের রাজ্যের বাইরেও কংগ্রেসের দুঃসময়ে একাধিকবার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন শিবকুমার। জানা যায়, ২০০২ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা বিলাসরাও দেশমুখ। অন্য রাজ্য হলেও সে সময় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দেশমুখের গদি বাঁচান শিবকুমার। বেঙ্গালুরুর প্রত্যন্ত এলাকায় নিজের রিসোর্টে মহারাষ্ট্রের বিধায়কদের নিমন্ত্রণ করে এক সপ্তাহের বেশি সময় রেখেছিলেন তিনি। এভাবে একাধিকবার নিজের রাজ্যের বাইরে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন শিবকুমার। এসব কর্মকান্ডের জন্যই রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর খুব আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বারবার কংগ্রেসের বিপদে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পুরস্কারও পান শিবকুমার। ২০২০ সালে কর্নাটক রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি করা হয় তাকে। তাঁর সমর্থকদের দাবি, সভাপতি হিসেবে রাজ্যে অসম্ভব পরিশ্রম করেছেন শিবকুমার। সেই পরিশ্রমের ফলেই এবার আশাতীত সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস। শুধু রাজৈতিক ভূমিকাই নয়, বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসকে বিপুল আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছেন তিনি। কর্নাটকে কংগ্রেসের সবচেয়ে ধনী নেতা হিসেবে পরিচিত শিবকুমার। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রার্থীদের সম্পদের বিবরনী নিয়ে কাজ করা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম’ জানায়, বর্তমানে শিবকুমারের ১ হাজার ৪১৩ কোটি রুপির সম্পদ রয়েছে। যদিও নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে তিনি তৃতীয় ধনী। বিপুল সম্পদের কারণে শিবকুমারকে অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা একাধিকবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলেছে। এমন অভিযোগেই নির্বাচনের আগে তিনি ১০৪ দিন কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালেও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শিবকুমার। সে সময় জেলে থাকা অবস্থায় কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এবার নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর এক বক্তব্যে সেই স্মৃতিচারণা করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন শিবকুমার। কথা বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে তার। awesome)
Check Also
৫২ শতাংশ পেয়ে এগিয়ে এরদোয়ান
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের ভোট গণনায় এগিয়ে আছেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট …