হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী

পৃথিবীটা কি ক্রমেই হিংসায় উন্মত্ত হয়ে উঠছে? মানুষ কি আর শাস্তি-স্বস্তি নিয়ে বাঁচতে পারবে না? শুক্রবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সংঘাত ও দুর্যোগে স্বদেশে বাস্তুচ্যুত ৭ কোটির বেশি মানুষ’ শীর্ষক খবরটি পড়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ২০২২ সাল শেষে ইউক্রেনে ৫৯ লাখ মানুষ নিজ বাড়ি থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে। সুদানে কয়েক সপ্তাহের সংঘাতের ফলে সেখানকার ৭ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণা ও কষ্ট ভুক্তভোগীরাই বোঝে।পৃথিবীর মানুষ আজ সম্পদের কাছে, ক্ষমতার কাছে, লোভের কাছে এতটাই নতজানু হয়ে পড়েছে যে এসব থেকে কিছুতেই নিজেকে দূরে সরাতে পারছে না। কথায় আছে ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। আজ পৃথিবীর মানুষ যেন বহু শতাব্দী ধরে চলমান এই মহৎ সত্যবাণীকে স্বেচ্ছায় অস্বীকার করে মৃত্যুর দিকে যাত্রা শুরু করেছে। এখন আবার দাস যুগে, ক্রুসেডের যুগে ফিরে গেলে পৃথিবীর কি মঙ্গল হবে? আবার যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহলে কি সুখে থাকবে পৃথিবীর মানুষ? বিজ্ঞান মানুষকে যেমন অপরিসীম সৃষ্টি ক্ষমতা দিয়েছে, তেমনি দিয়েছে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাও।এই বাস্তবতায় বর্তমান পৃথিবী একটি মানবিক সমাজব্যবস্থা প্রত্যাশা করছে। এই মানবিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রথমেই মানুষকে হিংসা ও লোভ পরিহার করতে হবে। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে উঠে অসাম্প্রদায়িক আচরণ করতে হবে। গণতন্ত্রের চর্চা দেশে দেশে আরও ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মারণাস্ত্র উৎপাদন সর্বাংশে পরিহার করতে হবে। যে নিরন্ন মানুষের মুখে আমরা একমুঠো অন্ন তুলে দিতে পারি না, সেই অনাহারী মানুষকে হত্যা করার অধিকার কি আমাদের আছে? নাকি সেই অধিকার থাকতে পারে? আমরা যদি কারও মঙ্গল করতে না পারি, তাহলে তার অমঙ্গল কামনা করি কেন?আমরা একটি গল্প জানি, যে গল্পটি একজন ভূমিলোভী মানুষের। তাকে বলা হয়েছিল, তুমি দৌড়াও। তুমি যত দূর দৌড়ে যেতে পারবে, তত দূর পর্যন্ত জমিই তোমাকে দেওয়া হবে। জমির লোভে দৌড়াতে দৌড়াতে লোকটি একসময় মারা গেল, সেই সঙ্গে মারা গেল তার সম্পদ-আকাঙ্ক্ষাও।বিশ্ববিখ্যাত লেখক তলস্তয় জমিদার ছিলেন। লেখালেখি করেও তিনি প্রভূত সম্পদ অর্জন করেছিলেন। তিনি একপর্যায়ে ঘর থেকে শূন্য হাতে বের হয়ে যান।মৃত্যুবরণ করেন নিঃসঙ্গ-সামান্য মানুষের মতো। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, সাড়ে তিন হাত ভূমিই মানুষের শেষ সম্বল।মানুষই মানুষের ভরসার জায়গা। মানুষই মানুষের সুখ-দুঃখের একমাত্র আশ্রয়স্থল। মানুষকে অকারণে কিংবা অর্থের লোভে হত্যা করে যারা আনন্দ পায়, ধন-সম্পদের পাহাড় গড়তে চায়, আমাদের সবার উচিত হবে তাদের ঘৃণা করতে শেখা।সব মানুষকে তার মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। অস্ত্রনির্ভর বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির আদিপত্য থেকে মুক্ত হতে হবে। হিংসা দিয়ে হিংসাকে ধ্বংস করার উন্মত্ততা পরিহার করতে হবে। মানুষ যেন মানুষের বড় শত্রু না হয়ে পরম মিত্র হয়ে ওঠে, সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।  Great)

About admin

Check Also

আটকে গেছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১ কোটি ৪১ লাখ ডলার

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১ কোটি ৪১ লাখ ডলার অর্থ আটকা পড়েছে। বাংলাদেশি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *