মেঘ সরিয়ে হাসছেন সূর্য

কথায় আছে, ‘প্রতিভা কখনো ছাই ছাপা থাকে না।’ সূর্যকুমার যাদবের ক্ষেত্রে এ কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে খাটে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তাঁকে চিনেছিল একটু দেরিতে। স্বাভাবিকভাবে তারকার ভিড়ে ভারতের জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া যে কারও জন্যই কঠিন।দেরিতে হলেও মাঠে ফুল ফোটানো তারকার কমতি নেই বিশ্ব ক্রিকেটে। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ মিসবাহ-উল-হক থেকে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটার মাইক হাসি তার বড় উদাহরণ হয়ে থাকবেন সব সময়। যে ফুল দেরিতে ফোটে তার সৌন্দর্য ও সুবাস নেওয়ার আগ্রহও থাকে সবার কাছে বেশি।তেমনি সূর্যকুমারের ব্যাটে রানের ফুলঝুরি দেখার অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন তাঁর ভক্তরাও। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো মাঠের চারপাশে শট খেলতে পারার দক্ষতার জন্য ইতিমধ্যে ৩২ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটার পরিচিত হয়ে উঠেছেন ‘৩৬০ ডিগ্রি’ নামে। শক্তির অপচয় না করে মিডল স্টাম্পে থাকা বলকে কবজির মোচড়ে অফসাইডে বাউন্ডারি ছাড়া করা তো কখনো প্রায় বসে পড়ে আপার কাটে ছয়; কিংবা রিভার্স স্কুপ—কি নেই সূর্যের শটে!ওয়াংখেড়েতে গত রাতেও যে তেজে গুজরাট টাইটান্সের বোলারদের পোড়ালেন সূর্য, সেটি দর্শকেরা তো বটে নিজেও স্মরণে রাখবেন দীর্ঘদিন। ক্যারিয়ারের প্রথম আইপিএল সেঞ্চুরি বলে কথা! ৪৯ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস, ১১ চার ও ‍৬ ছয়। আইপিএলে যেটি ২০ তম দ্রুততম সেঞ্চুরি আর মুম্বাইয়ের হয়ে সনাথ জয়াসুরিয়ার পর (২০০৮) দ্বিতীয় দ্রুততম।এমন এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পর সূর্যও মনে করিয়ে দিলেন ‘স্কাই হ্যাজ নো লিমিট’। আকাশের কোনো সীমা নেই। তাঁর নামের তিন আদ্যক্ষর যোগ করলে যে ‘স্কাই’-ই হয়, সেটি এখন কে না জানে! কিন্তু কয়েক দিন আগে সেই আকাশের নীলও ঢেকে দিয়েছিল মেঘ। এবারের আইপিএলের শুরুতে ছিলেন বেশ বিবর্ণ।গত মার্চে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টানা তিন গোল্ডেন ডাকের ফর্মটা আইপিএলেও টেনে এনেছিলেন সূর্য। মার্চের গরমেও সূর্যের মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকায় অবাক হয়েছিলেন সবাই। তবে অফফর্ম থেকে ইনফর্মে ফিরতে সময় লাগল না বেশি দিন। প্রথম ম্যাচে কোনোভাবে ১৫ রান করলেও পরের দুই ম্যাচে তাঁর রান ১ ও ০। এরপর এই ওয়াংখেড়েই স্বরূপে ফেরা। ২৫ বলে ৪৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এরপর থেকে দীপ্তি ও উত্তাপ ছড়িয়েই যাচ্ছেন। মেঘ। চলতি আইপিএলের চতুর্থ সেঞ্চুরিটি করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় এক লাফে তৃতীয় স্থানে ওঠে এসেছেন সূর্য। ১২ ইনিংসে এখন পর্যন্ত তাঁর রান ৪৪৯।অবশ্য সূর্যের ক্যারিয়ারের শুরুটাও এত মসৃণ ছিল না। ফর্মের সঙ্গে যুদ্ধটা নতুন নয় তাঁর। ২০১২ থেকে আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরের পাঁচ বছর ‘মেঘে ঢাকা তারা’ হয়েই ছিলেন। জীবনের মোড়টা ঘুরতে শুরু করে কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে ২০১৮ সালে ফের মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে ফেরার পর। সেই থেকে অধিনায়ক রোহিত শর্মার পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইটির নির্ভরশীল ব্যাটার হয়ে ওঠেন সূর্য।মুম্বাইয়ে ফেরার মৌসুমেই নিজের তেজ দেখাতে শুরু করেন সূর্য। ১৪ ইনিংসে করেন অষ্টম সর্বোচ্চ ৫১২ রান। পরের দুই মৌসুমে ৪২৪ ও ৪৮০ রান—২০২১ সালে এসে ৩০ বয়সে এসে জাতীয় দলে টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে ডাক পাওয়া। এরপর তাঁর চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে উদ্ভাসিত হয়নি এমন চোখ খুব কমই আছে। ইতিমধ্যে ৪৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেললেও সূর্য টেস্ট খেলেছেন মাত্র একটি, ওয়ানডে সংখ্যা ২৩। awesome)

About admin

Check Also

ঈদের ধারাবাহিক ‘বিজয়ের গল্প’

নম্র-ভদ্র ছেলে বিজয়কে এলাকার ছোট-বড় সবাই অনেক পছন্দ করে। কিছুদিন পরেই বিজয়ের বিয়ে। শেষ মুহূর্তে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *