মৃত্যুর আগে সম্পদ ভাগ করে দেওয়া কি জায়েজ

প্রশ্ন: মৃত্যুর আগে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দেওয়া কি জায়েজ? এ ক্ষেত্রে ইসলামি সম্পদ বণ্টনের অন্যতম নীতি ‘পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পাবে’ কি বাস্তবায়ন করতে হবে, নাকি নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে দিতে হবে? ইসলামি শরিয়তের আলোকে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।সামির আলী, নারায়ণগঞ্জপ্রশ্ন: ইসলামি শরিয়তের নিয়ম হলো, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে কাফন-দাফন, ঋণ ও অসিয়ত (যদি থাকে) আদায় করার পর বাকি সম্পদ ওয়ারিশদের মধ্যে ইসলামি মিরাসনীতি অনুসারে বণ্টন করা হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এর ব্যতিক্রম করা অনুচিত। তবে কেউ যদি বিশেষ কারণে মৃত্যুর আগে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দিতেই চায়, ইসলামে তার অনুমতি আছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার ইচ্ছেমতো যাকে যে পরিমাণ চান, লিখে দিতে পারবেন। অবশ্য যৌক্তিক কারণ ছাড়া ওয়ারিশদের মধ্যে তারতম্য করলে কিংবা দু-একজনকে দিয়ে বাকিদের বঞ্চিত করলে মারাত্মক গুনাহ হবে এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।হাদিসে এসেছে, একদিন সাহাবি বশির (রা.) তাঁর ছেলে নুমানের নামে একটি জমি লিখে দিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী আমরাহ বিনতে রাওয়াহা (রা.) এ ব্যাপারে রাসুল (সা.)-কে সাক্ষী রাখার পরামর্শ দিলেন। রাসুল (সা.)-কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বশিরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নুমানকে যে পরিমাণ দিয়েছ, তোমার অন্য সন্তানদেরও কি একই পরিমাণ দিয়েছ?’ তিনি ‘না’ বললে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে এটা তো অন্যায় হয়ে গেল। আমি অন্যায়ের সাক্ষী হতে পারব না। আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করো।’ (মুসনাদে আহমদ)অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিশকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মিরাস থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ)অবশ্য সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি বাবা-মায়ের বেশি অনুগত হয়, তাদের দেখাশোনার প্রতি অধিক যত্নবান হয় অথবা ইলম-আমল ও তাকওয়া-পরহেজগারিতে কোনো সন্তান অন্যদের তুলনায় অগ্রগামী হয়, সে ক্ষেত্রে বাবা-মা খুশি হয়ে তাকে কিছু বেশি দিতে চাইলে তা জায়েজ। এভাবে দেওয়া একাধিক সাহাবি থেকে প্রমাণিত। (মুয়াত্তা মালেক, ফতহুল বারি)মৃত্যুর আগে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দেওয়ার সময় ‘পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পাবে’—এই নীতি রক্ষা করতে হবে কি না, সে ব্যাপারে আলিমদের দুটি মত আছে। মালেকি ও শাফেয়ি মাজহাবের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলিম এবং হানাফিদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মত হলো, এ ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমান দিতে হবে। আর হাম্বলি মাজহাব ও হানাফিদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মত অনুসারে এ ক্ষেত্রে ‘পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পাবে’—এই নীতি বাস্তবায়ন করা উচিত। (আল ফিকহুল ইসলামি ওয়া-আদিল্লাতুহু) আমাদের দেশের আলিমগণ দ্বিতীয় মতের পক্ষে ফতোয়া দিয়ে থাকেন। উত্তর দিয়েছেন: মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক awesome)

About admin

Check Also

অন্তর্ভুক্তিমূলক নাকি আরও কঠোরতার পথে তুরস্ক

টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এরই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *