‘ফেডারেশন কেন এই বোকামি করে জানি না’

জুলাইয়ের শেষ দিকে আজারবাইজানে বসবে ফিদে দাবা ও মহিলা দাবা বিশ্বকাপের আসর। বঙ্গবন্ধু জোনাল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছেলে ও মেয়েদের বিভাগ থেকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান ও মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার জান্নাতুল ফেরদৌস। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ফাহাদ। নিজের ভাবনাগুলো আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন ফাহাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাজিম আল শমষের প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু জোনাল দাবার শিরোপা জেতার পর আপনাকে খুব বেশি রোমাঞ্চিত মনে হয়নি। কারণটা কী? ফাহাদ: একেবারেই লাগছে না এমনও না। এটা আমার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। তবে এ বছর আমার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। সেই টুর্নামেন্টগুলোর চেয়ে বিশ্বকাপ সে হিসেবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। প্রশ্ন: বিশ্বকাপ সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ না? ফাহাদ: বিশ্বকাপ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার জন্য এই বছর বিশ্বকাপ বেশি গুরুত্ববহ নয়। আমাকে এই বছর জিএম নর্ম করতে হবে, গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হবে। আর বিশ্বকাপ থেকে তো জিএম নর্ম হয় না। প্রশ্ন: গ্র্যান্ডমাস্টার হতে আপনার এই বছর বেশ তাড়া দেখা যাচ্ছে। এই তাড়া আবার বাড়তি চাপ হয়ে যাচ্ছে না তো? ফাহাদ: আমি কোনো চাপ নিই না। যা করি, মনের আনন্দেই করি। যেটা আনন্দের সঙ্গে করি, সেখানে চাপ থাকা উচিত না। প্রশ্ন: গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হলে আপনাকে তিনবার গ্র্যান্ডমাস্টার পর্যায়ে ভালো করতে হবে, নর্ম তুলতে হবে। এই তিনটি নর্ম পূরণ করা এই বছর কি সম্ভব? ফাহাদ: আশা করি এই বছর হতে পারব এবং এটা সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে আমাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে সব টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। এই বছর ইরান ও ইউরোপে যে টুর্নামেন্টগুলো খেলেছি, সেগুলো গ্র্যান্ডমাস্টার পর্যায়ের ছিল না। গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হলে ভালো খেললে হবে না, অসাধারণ খেললেই শুধু গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া সম্ভব। আমি চাই যত দ্রুত হওয়া যায়। তবে এটা নির্ভর করে টুর্নামেন্টের সংখ্যার ওপর। আমি যত বেশি খেলব, ততই বেশি সুযোগ বাড়বে নর্ম পাওয়ার। এ জন্য আমাকে অন্তত ১০-১২টি টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। প্রশ্ন: এ বছর কটি টুর্নামেন্ট পাচ্ছেন? ফাহাদ: আমরা টুর্নামেন্টের এক-দুই মাস আগে ঠিক করি কোথায় খেলব। এ মাসের ২০ তারিখে যেমন ভিয়েতনামে একটি টুর্নামেন্ট আছে। সে টুর্নামেন্টের ভিসা নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে, তাই সেখানে খেলতেও পারি আবার নাও পারি। টুর্নামেন্ট কমিটি যদিও চেষ্টা করছে ভিসার ব্যবস্থা করার। প্রশ্ন: প্রায়ই দেখা যায় দাবাড়ুরা দেশের বাইরে খেলতে গেলে ভিসা কিংবা বিমানের টিকিটসংক্রান্ত জটিলতায় হিমশিম খান। দাবার মতো মনস্তাত্ত্বিক খেলায় এই সমস্যাগুলো মনে কতটা চাপ ফেলে? ফাহাদ: অনেক সমস্যা তৈরি করে। জানতে পারলাম ভিয়েতনামে ভিসা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। এমনটা হলে অনেক সময় ভালো খেলার উদ্দীপনা কমে যায়। আমি এখনো জানি না খেলতে পারব কি না। অনেক সময় ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও টুর্নামেন্টে খেলা হয় না ভিসা আর টিকিট জটিলতায়। এখন এভাবেই চলতে হবে। বাংলাদেশে এর চেয়ে বেশি সুবিধাও এখন আশা করা কঠিন। প্রশ্ন: আপনি আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছেন প্রায় চার বছর আগে। ধরে নেওয়া হয়েছিল আপনি খুব অল্প সময়েই গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে যাবেন। এই দীর্ঘ সময়ে সাফল্য না আসার পেছনে কারণগুলো কী কী? ফাহাদ: অনেক কারণ আছে। আমি আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছি ২০১৯ সালের মার্চে। এরপর ভারতে কয়েকটি টুর্নামেন্ট খেলেছি। একবার নর্ম পাওয়ার খুব কাছেও চলে গিয়েছিলাম। মাত্র আধা পয়েন্টের কারণে পাইনি। এরপর মহামারি শুরু হলো। টানা তিন বছর খেলতে পারিনি। এটা ছিল মূল কারণ। এর মাঝে আমরা তেমন প্রশিক্ষণও নিতে পারিনি। ফেডারেশনের মাধ্যমে তেমন কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি। গত চার বছরের মধ্যে শুধু তিন সপ্তাহের জন্য একজন কোচকে আনা হয়েছিল। কোচিং খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রশ্ন: দাবাতে এখন নিয়মিতভাবেই কোনো না কোনো টুর্নামেন্ট হচ্ছে। অনেক উঠতি দাবাড়ুও উঠে আসছে। তাদের জন্য কি ফেডারেশন এক বা একাধিক ভালো মানের কোচের ব্যবস্থা করতে পারে না? ফাহাদ: আমরা এই দাবি আগেই তুলেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ফেডারেশন অবশ্যই কোচের ব্যবস্থা করতে পারে। ফেডারেশন যেভাবে টাকা খরচ করে, আমার কাছে মনে হয় না খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে টাকা খরচ করা প্রয়োজন, সেখানে না করে যদি অন্য জায়গায় ধানের বীজ রোপণ করে তাহলে তো হবে না। ফেডারেশন কেন এই বোকামি করে আমি জানি না। তাদের উচিত বাংলাদেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে পরামর্শ করে ভবিষ্যতের গ্র্যান্ডমাস্টার তুলে আনার ব্যবস্থা করা। ফেডারেশন কেন এটা করে না, সেটা তাদেরই জিজ্ঞেস করা উচিত। awesome)

About admin

Check Also

অন্তর্ভুক্তিমূলক নাকি আরও কঠোরতার পথে তুরস্ক

টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এরই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *