গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন নির্বাচনী হলফনামায় ৪ কোটি ৯৬ হাজার ৬৮০ টাকার তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তুলেছেন সিটি নির্বাচনের অপর মেয়র প্রার্থী মহানগরীর নলজানি এলাকার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম।এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। আতিকুল ইসলাম গণফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।সংশ্লিষ্ট কর অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী জায়েদা খাতুন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নির্বাচন কমিশনে হলফনামা দাখিল করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন আতিকুল ইসলাম। এই হলফনামা কর্মকর্তাদের কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।এ প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাছাইয়ের সময় আয়কর রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে হলফনামার তথ্যের গরমিলের বিষয়টি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। এ কারণে জায়েদা খাতুনকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে হয়।’ তিনি আশা করেন, অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে দাখিল করা ২০২২-২০২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন যাচাই করা হয়। তাতে দেখা যায়, সর্বজনীন স্ব-নির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ২০২২-২০২৩ করবর্ষে একমাত্র আয়ের খাত ব্যবসা থেকে আয় ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন জায়েদা খাতুন। আইন অনুযায়ী, নারীদের করশূন্য আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা।আয়কর রিটার্নের পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীতে জায়েদা খাতুন ব্যবসার পুঁজি (মূলধনের জের) হিসেবে দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৬৬ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা তিনি কোথায় রেখেছেন বা কোথায় বিনিয়োগ করেছেন বা কোথায় কী ব্যবসা চলে তা জায়েদা খাতুন নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডের ২ হাজার ৫০০টি শেয়ারের মূল্য দেখিয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ জায়েদা খাতুন করবর্ষের শেষে মোট পরিসম্পদ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিগত বছরের শেষে তাঁদের মোট পরিসম্পদ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তিনি ২০২২-২০২৩ করবর্ষে সম্পদের পরিবৃদ্ধি দেখিয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার আর পারিবারিক ব্যয় ২ লাখ টাকা। এসব হিসাব অনুযায়ী তিনি মোট প্রদর্শিত আয় দেখান ৩ লাখ ৪৫ হাজার।কিন্তু, আয়কর রিটার্নের বিগত আয় বছরের শেষে তাঁর মোট পরিসম্পদ ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদর্শন করলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে টিআইএন সার্চ করে পূর্বের করবর্ষগুলোতে জায়েদা খাতুনের আয়কর দেওয়ার কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। বিগত করবর্ষগুলোতে কর না দেওয়ায় জরিমানার বিধান থাকলেও, জায়েদা খাতুনের আয়কর রিটার্নে জরিমানার তথ্য উল্লেখ নেই। এ ছাড়া হলফনামায় উল্লেখিত অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫০০টি শেয়ারের মালিক দেখিয়েছেন। কিন্তু এসব শেয়ারের বিপরীতে তিনি কত টাকা মুনাফা পেয়েছেন তাও জায়েদা খাতুন তাঁর আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি। আয়কর পরিপত্র ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী কোনো করদাতার যদি পরিসম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকার বেশি হয়, তাহলে সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। কিন্তু জায়েদা খাতুন ২০২২-২০২৩ করবর্ষে কোনো প্রকার কর দেননি এবং নিট সম্পদের ওপর কোনো সারচার্জ দেননি। মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী জায়েদা খাতুনের কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই।জায়েদা খাতুন নির্বাচনী হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ৩৫ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫০ হাজার টাকা, অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডের ২ হাজার ৫০০টি শেয়ার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার, ৩০ তোলা স্বর্ণ দেখিয়েছেন যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ টাকা (৭ মে,২০২৩ তারিখের বাজার দর ৯৮,৪৪৪ /- টাকা ভরি হিসাবে), ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ হিসাবে হলফনামায় জায়েদা খাতুন মোট সম্পদ দেখিয়েছেন ৭০ লাখ ২৩ হাজার ৩২০ টাকা। ২০২২-২০২৩ করবর্ষে আয়কর রিটার্নে মোট পরিসম্পদ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৭১ হাজার ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁর কোনো দায় নেই। ফলে আয়কর বিবরণী অনুযায়ী তাঁর মোট পরিসম্পদ ৪ কোটি ৭১ হাজার ২০ হাজার টাকা। হলফনামায় যা দেখানো সম্পদের মধ্যে ৪ কোটি ৯৬ হাজার ৬৮০ টাকার গরমিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। আমরা অভিযোগটি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেব।’ awesome)
Check Also
অন্তর্ভুক্তিমূলক নাকি আরও কঠোরতার পথে তুরস্ক
টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এরই …