পেশাগত জীবনের পাশাপাশি নিজেকে সময় দিন

প্রশ্ন: আমি একজন কর্মজীবী নারী। আমাদের আট বছরের সম্পর্ক ছিল। তিন মাস আগে আমার প্রেমিকের ইচ্ছাতেই আমাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের মানসিক ধকল আমি এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। অথচ আমি এই সম্পর্কে যেতে চাইনি। আমাকে সে ইমোশনাল কথাবার্তা বলে সম্পর্ক তৈরি করেছিল।আমাকে ছাড়া বাঁচবে না—এমন কথা বলেছিল। অথচ সেই মানুষটি আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমাদের বিচ্ছেদ হওয়ার তিন-চার মাস আগে সে অন্য একজনের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়? যাঁদের এ রকম দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পর বিচ্ছেদ হয়, তাঁরা কি পরবর্তী জীবনে সুখী হন?ইরাবতী, কুষ্টিয়াআমি মনে করি, আপনি সৌভাগ্যবান। দুটি কারণে, আপনি কর্মজীবী আর সম্পর্কটা বিয়ের পর্যায়ে যাওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। আমি আপনার মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও পরিমিত রুচিবোধের পরিচয় পাচ্ছি। আপনি কিন্তু আপনার প্রাক্তনের আবেগকে প্রাধান্য দিতেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তিনি সম্ভবত কোনো বিষয়ে তেমন সিরিয়াস নন। এ রকম কিছু মানুষ থাকে, এদের সঙ্গে সম্পর্ক এমনিতেও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বিচ্ছেদের পর স্বাভাবিক জীবনে আসতে হলে, মন থেকে এই ভালোবাসার অধ্যায়ের এখানেই ইতি টানুন। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করুন। নিজের যা অর্জন, সেগুলোর মূল্যায়ন করুন।আমি এমন অনেককে খুব কাছ থেকে দেখেছি, যাঁরা বিচ্ছেদের পর খুব ভালো আছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার কোনো ভুল নেই, দোষও নেই।যে মানুষটি আট বছরের সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে মাত্র তিন মাসের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেন, তাঁর কথা চিন্তা করে আপনি আর একটি মুহূর্তও নষ্ট করবেন না। তবে প্রাক্তনকে ভুলতে গিয়ে এখনই বিয়ে বা নতুন কোনো সম্পর্কে জড়াবেন না। নিজেকে সময় দিন। নিজে সময় নিন। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি আপনার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। আমি নিশ্চিত, একজন কথা ও আবেগসর্বস্ব মানুষের ভালোবাসার অভিনয় থেকে মুক্তি পেয়ে আপনি স্বস্তি ও শান্তি ফিরে পাবেন। একটু বুঝেশুনে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আপনি অবশ্যই পরবর্তী জীবনে সুখী হবেন।  প্রশ্ন: আমি একজন বিবাহিত নারী। ২০ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। আমি এক সন্তানের মা। স্বামী আর আমার বয়সের পার্থক্য প্রায় ১০ বছর। আমাদের দাম্পত্য জীবনের প্রধান সমস্যা হলো, আমরা দুজন আলাদাভাবে ভালো মানুষ। তবে আমাদের দুজনের মধ্যে মানসিক কোনো সম্পর্ক অন্তত আমি অনুভব করি না। আমাদের মধ্যে ছোট ছোট সমস্যার কারণে মাসের পর মাস কোনো কথা হয় না। আমার কেমন যেন দমবন্ধ লাগে। আমি একজন কর্মজীবী নারী। আমি সারা দিন কাজ করেও শান্তি খুঁজে পাই না। ডিভোর্সের দিকেও যেতে পারছি না। কারণ, আমার স্বামী মনে করে, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। আমি এ বিষয়ে কী করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ভোলাআপনার যে সমস্যাটির কথা বলেছেন, সেটি যেমন ব্যক্তিগত, তেমনি এই নাগরিক ব্যস্ত জীবনে খুব প্রাসঙ্গিক। স্বামীর সঙ্গে মানসিক দূরত্ব কষ্টের। কারণ, দিন শেষে পরিবারের মানুষদের মনটাই হয় আমাদের গন্তব্য। তবে দুটি কথা আপনি খুব সুন্দর লিখেছেন। আপনারা আলাদাভাবে ভালো মানুষ। আর আপনার স্বামী মনে করেন, আপনাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। আমার মনে হয়, আপনি হয়তো একটু স্পর্শকাতর ও অভিমানী। সে জন্যই হয়তো দূরত্ব বাড়ছে।আপনারা দূরে কোথাও বেড়াতে যান। অনেকটাই দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমার মতো। মন খুলে আপনার স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন। আপনি কী চান, কী প্রত্যাশা করেন তাঁর কাছ থেকে। আপনিই না হয় শুরু করলেন। বিশেষ দিনে উপহার দিন, তাঁর কোনো গুণের প্রশংসা করুন, তাঁর জন্য আলাদা, একান্ত সময় রাখুন। আরেকটি কথা, যেকোনো সমস্যার জন্য কথা বন্ধ রাখা কিন্তু সমাধান নয়। আপনার স্বামী হয়তো বুঝতেই পারেননি, কেন আপনি কথা বন্ধ করলেন বা সমস্যা কোথায়।আপনি কর্মজীবী নারী, তাই বলব, পেশাগত জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন—দুটির ভারসাম্য রক্ষা খুব জরুরি। সারা দিন কাজ করে নিজে যদি বিশ্রাম না নেন, তাহলেও কিন্তু শান্তি পাওয়া যায় না। এটা সত্যি, হয়তো স্বামীর সঙ্গে হৃদয়ের বা আত্মিক টান অনুভব করছেন না, একটি সন্তানও আছে আপনাদের। তাই ডিভোর্সের সিদ্ধান্তটা আপাতত বাদ দিন। একটু নতুনভাবে আজ থেকে শুরু করুন, দেখবেন, ভালো আছেন।মানসিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. ফারজানা রহমান,সহযোগী অধ্যাপক, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট awesome)

About admin

Check Also

নীরব ঘাতক হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে

হাড়ের ক্ষয় বলতে এর ভেতর ফাঁপা হয়ে যাওয়া বোঝায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে অস্টিওপোরোসিস। অর্থ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *