গত মাসে, চীন ও সিঙ্গাপুর মালাক্কা প্রণালীতে তাদের নৌ-মাইন অপসারণের ক্ষমতা বাড়ানো এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে সামুদ্রিক মহড়া চালিয়েছে। এই মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা জোরদার করা।
চীন সম্প্রতি কম্বোডিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়াও পরিচালনা করেছে, যেখানে মাইন অপসারণ ও নৌ কৌশলের মতো কার্যক্রম রয়েছে।
এই মহড়াগুলোর মাধ্যমে উভয় দেশের সক্ষমতা প্রমাণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, চীনের সামরিক খাতে যে আধুনিকায়ন চলছিল, সেই প্রেক্ষাপটে দেশটিকে দীর্ঘদিন ধরে একটি ‘উঠতি শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু এই বিশ্লেষণ মনে হয় এখন শেষ হয়ে গেছে। চীন এখন আর উঠতি শক্তি নেই, তারা মারাত্মক শক্তিতে বা সুপারপাওয়ারে পরিণত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির যুক্তরাষ্ট্র স্টাডিজ সেন্টারে নতুন একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানা গেছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কৌশল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নজিরবিহীন সংকটে রয়েছে। ওয়াশিংটনকে হয়তবা তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে রক্ষা করার জন্য চীনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
তারা বলছেন, আমেরিকা সামরিক শক্তির দিকে থেকে ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আর একাধিপত্য উপভোগ করতে পারছে না এবং দেশটির নিজেদের সপক্ষে ক্ষমতার একটা ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে বেইজিংয়ের দারুণ সব ক্ষেপণাস্ত্রের যে সম্ভার রয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এবং তার বন্ধু দেশগুলোর জন্য হুমকি।
চীনের কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল এশিয়া এবং নিজেদের আশপাশে শক্তিবৃদ্ধি। এখানে দুটি মূল বিষয়- লক্ষ এবং তার নাগাল পাওয়া।
তার অর্থ এশিয়াতে চীন ইতিমধ্যে একটা সুপার-পাওয়ার হয়ে উঠেছে যেটার ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা এবং যুদ্ধের লড়াই নিয়ে গবেষণা করেছে এবং তারা একটা কার্যকর কৌশল তৈরি করেছে।
চীনের জন্য মালাক্কা প্রণালীতে সামুদ্রিক অবরোধের ক্ষেত্রে পাকিস্তানে প্রবেশাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২০১৭ সালে ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জিবুতিতে চীন তার প্রথম বিদেশি সামরিক ঘাঁটি চালু করার পর অঞ্চলটিতে চীনা আগ্রহ প্রতিবেশী ভারতের উদ্বেগকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বেইজিং সফরে গেছেন পাকিস্তানের নৌবাহিনীর প্রধান আমজাদ খান নিয়াজি। আর সেখানেই চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সফররত পাকিস্তান নৌবাহিনী প্রধানকে জানান, দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রধান অংশ।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। প্রায়ই একে অপরের ভূখণ্ডে দ্বিপক্ষীয় সামরিক মহড়া চালায়। সম্পর্কের এ ধারাবাহিকতায় এবার পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়াতে চায় চীন।
পাকিস্তানের নৌবাহিনী প্রধানকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফু জানান, পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়াতে চায় চীন। পাশাপাশি উভয়পক্ষই সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সন্ধান করছে।
গত এপ্রিলের শেষ দিকে চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান জানান, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও প্রসারিত করতে আন্তরিক বেইজিং।
চীন ও ভারতের ভবিষ্যত শক্তির ভারসাম্য পরিমাপের থার্মোমিটার বলা হয় মালাক্কা প্রনালীকে। মালাক্কা প্রণালীর পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ভারতের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। ফলে মালাক্কা প্রনালীর এ প্রবেশ মুখে রয়েছে ভারতের ন্যাচারাল আধিপত্য। আর চীনা সমুদ্র বানিজ্যের মূল রুট এ মালাক্কা প্রণালী।
মালাক্কা প্রণালী ঘিরে যেমন রয়েছে ভারতের স্বাভাবিক আধিপত্য তেমনি চীন এগিয়ে রয়েছে তার নৌ শক্তিসহ সাার্বিক সামরিক শক্তিতে। ফলে মালাক্কা প্রনালী ঘিরে চলছে এশিয়া-প্যাসেফিক অঞ্চলে বড় ধরনের লড়াই প্রস্তুতি।
চীন ও ভারত মধ্যে এ লড়াইয়ের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে বর্তমান বিশ্বের সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে মালাক্কা প্রণালী।
সূত্র: বিবিসি ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
amazing)