দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় গভীর নিম্নচাপ বিরাজ করছে। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে নাম হবে এর নাম হবে মোখা, যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই নিম্নচাপের কারণে উপকূলবর্তী এলাকায় এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।বাংলাদেশে এখন যে সংকেত ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয় তা ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি। মূলত সমুদ্রগামী জাহাজ ও বন্দরের নিরাপত্তার জন্য এটি তৈরি হয়, যা আন্তর্জাতিক আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা থেকে আলাদা। সনাতনী এই সংকেত ব্যবস্থায় জনসাধারণের জন্য সতর্কবার্তা খুব একটা গুরুত্ব পায়নি তখন। সমুদ্র বন্দরের সংকেতসংকেত নম্বর ১ নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেতসংকেত সমূহের অর্থজাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬১ কিমি, যা সামৃদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।সংকেত নম্বর ২ নং দূরবর্তী হুশিয়ারী সংকেতসংকেত সমূহের অর্থদূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিমি। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদেপড়তে পারে। সংকেত নম্বর ৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশশ্থা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কিঃমিঃ হতে পারে।সংকেত নম্বর ৪ নং স্থানীয় হুশিয়ারী সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘন্টায় ৫১-৬১ কিমি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।সংকেত নম্বর ৫ নং বিপদ সংকেতসংকেত সমূহের অর্থ|বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামৃদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূলঅতিক্রম করতে পারে।সংকেত নম্বর ৬নং বিপদ সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামৃদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।সংকেত নম্বর ৭ নং বিপদ সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামৃদ্রিক ঘৃণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি:মি:। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।সংকেত নম্বর ৮ নং মহাবিপদ সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুক্ধ ঘৃণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্ধে হতে পারে৷ প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।সংকেত নম্বর ৯ নং মহাবিপদ সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষব্ধ এক সামৃদ্রিক ঘৃণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কি:মি: বা তার উর্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।সংকেত নম্বর ১০ নং মহাবিপদ সংকেতসংকেত সমূহের অর্থবন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামৃদ্রিক ঘৃণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্ধে হতে পারে৷ প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।সংকেত নম্বর ১১ নং যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সংকেতসংকেত সমূহের অর্থআবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দূর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।নদী বন্দরের সংকেতসংকেত নম্বর ১-নং নৌ সতর্ক সংকেতসংকেতের অর্থবন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিমি গতিবেগের কালবৈশাখী ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার উপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।সংকেত নম্বর২-নং নৌ হুশিয়ারী সংকেতসংকেতের অর্থবন্দর এলাকা নিন্নচাপের সমতুল্য তীব্রতার একটি ঝড় যার গতিবেগ ঘন্টায় অনুষ্ধা ৬১ কিমি বা একটি কালবৈশাখী ঝড়, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিমি বা তদুদ্ধ। নৌ-যান এদের যে কোনটির কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌ-যানকে দ্রত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।সংকেত নম্বর৩-নং নৌ- বিপদ সংকেতসংকেতের অর্থবন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘন্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিমি পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামৃদ্রিক ঝড় সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সকল প্রকার নৌ-যানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।সংকেত নম্বর৪নং নৌ-মহাবিপদসংকেতের অর্থসংকেত বন্দর এলাকা একটি প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামৃদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিমি বা তদুদ্ধ। সকল প্রকার নৌ-যানকে নিরাপদ আশ্রয় থাকতে হবে।সংকেত প্রচার ও পতাকা উত্তোলন পদ্ধতি৪ নম্বর সংকেত: ১টি সংকেত পতাকা উত্তোলন করতে হবে। মৌখিকভাবে একে অপরকে জানাতে হবে। ৫ থেকে ৭ নম্বর সংকেত: ২টি সংকেত পতাকা উত্তোলন করতে হবে। মেগাফোন এবং মাইক দিয়ে প্রচার; ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জরুরি সভা করতে হবে। ৮ থেকে ১০ নম্বর সংকেত: ৩টি সংকেত পতাকা উত্তোলন করতে হবে। মেগাফোন, মাইক, হ্যান্ড সাইরেন, পাবলিক এড্রেস সিস্টেম ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণকে জানাতে হবে।সমুদ্রবন্দরে ঝড়ের সতর্ক বার্তা হিসেবে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত, ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের পর ৫,৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত; ৮,৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়। সর্বশেষ ১১ নম্বর দিয়ে বোঝানো হয়-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পাশাপশি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য রয়েছে ১ নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত, ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত, ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত ও ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সংকেত। সমুদ্রবন্দরের জন্য সংকেতগুলোর মধ্যে ৫,৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মাত্রা একই। আবার ৮,৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতেরও মাত্রা এক। ঝড় কোন দিক দিয়ে যাবে তার ভিত্তিতে নম্বর আলাদা করা হয়, যদিও বিপদ সব ক্ষেত্রেই সমান।এর ফলে সাধারণের মধ্যে অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ মনে করে, সংকেত যত বেশি, বিপদ তত বড়। ফলে দ্রুততম সময়ে বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।এই সংকেত ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য গত আড়াই দশকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি সংকেত ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ জমা দিয়েছিল, তাও পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি।আরও পড়ুন: Great)