একটা সময় আমাদের দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে খুব জোরালোভাবে প্রচারণা চালানো হতো। সেই প্রচারণার ফলও পাওয়া গেছে। জলিদা বেগম যখন ছোট ছিলেন, হয়তো তখন এই ক্যাম্পেইন তাঁর নজরে এসেছিল। আবার তা না-ও হতে পারে। কিন্তু তিনি যে উপলব্ধি করেছেন, তা সত্যিই মুগ্ধ করে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৪৪ বছর বয়সী এই নারী। তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভার কাউন্সিলর।ছোটবেলায় অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি জলিদা। অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। এখন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকা মানে পিছিয়ে থাকা। বর্তমান সময়ে আশপাশের প্রায় সবাই শিক্ষিত, আর তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে অশিক্ষিত রয়ে গেছেন, সালিস-দরবারে জলিদার স্বাক্ষর দেখে অনেকে মুখ টিপে হাসেন—এই পীড়া থেকেই তিনি বুঝতে পারেন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। তাই বয়সের তোয়াক্কা না করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কয়ামাজমপুর উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে কারিগরি শাখায় ভর্তি হন। ভালো ফলাফলও করেন।জলিদা ইতিমধ্যেই জনপ্রতিনিধি হয়ে গেছেন, তাই চাইলেই ক্ষমতার দাপটে সব কাজ সিদ্ধি করে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি স্বশিক্ষিত হতে চেয়েছেন—এটা বড় ব্যাপার। জনগণের জন্য কাজ করতে গেলে যেসব দাপ্তরিক বা সরকারি নিয়মকানুন জানতে হয়, তা তিনি নিজের গুণেই শিখে নিতে পারবেন।শিক্ষা একজন মানুষের মস্তিষ্ককে খুলে দেয়, মানুষ নিজের ভাবনার জগৎ বড় করতে পারে এবং নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি দিয়ে কোনো বিষয় বিবেচনা করতে পারে। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো যদি একজন জনপ্রতিনিধির মধ্যে থাকে, তাহলে তিনি প্রকৃতপক্ষেই জনগণের জন্য কাজ করতে পারবেন।তবে যাঁরা দুর্নীতি করতে চান, তাঁরা শিক্ষিত হয়েও নিজেকে আটকাতে পারেন না। কারণ, তাঁদের শিক্ষাটা প্রকৃত বা সুশিক্ষা হয় না; বরং তাঁরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জনগণের জানমাল লুট করে নেন। এ রকম ভূরি ভূরি উদাহরণ আমাদের আশপাশেই আছে। পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা টেলিভিশনের খবরে চোখ রাখলে এসব দুর্নীতিবাজের গল্প পাওয়া কঠিন কিছু না।শিক্ষিত মানুষ যে জাতির ভবিষ্যৎ আর শিক্ষা যে জাতির মেরুদণ্ড, তা তো এখন সবাই জানে। কিন্তু সুশিক্ষার কথা যাঁরা ভুলে যান, তাঁরাই করে বসেন দুর্নীতি। আর তাঁদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড আমাদের মন খারাপ করে দেয়।জলিদা বেগমের শিক্ষা গ্রহণ যেমন নিজের কাজে আসবে, তেমনি তিনি তা জনগণের কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি ভবিষ্যতে বদলে যাবেন কি না, আমরা জানি না; তবে কামনা করি জলিদা বেগমকে দেখে আরও মানুষ যেন উদ্বুদ্ধ হয় শিক্ষিত হতে। বর্তমানে দেশে শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। বছর বছর তা বেড়ে চলেছে বলে আমরা আনন্দিত হতেই পারি। তবে সেই শিক্ষাটা যেন শুধু সনদ পাওয়ার জন্য না হয়, সেটা যেন সুশিক্ষা হয়—এমন প্রত্যাশা করাটাও যুক্তিসংগত। জলিদা বেগম যেন এমন সুশিক্ষার ব্যবহার করেন জনগণের কাজে, সে জন্য তাঁর প্রতি শুভকামনা রইল। awesome)