ভারতের মণিপুরে সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৬৫ 

ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ২০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সম্প্রতি মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়কে ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এরপর তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় আদিবাসী এ সম্প্রদায়ের মধ্যে। গত বুধবার থেকে মণিপুরে স্থানীয় কুকি আদিবাসীদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘাত শুরু হয়। রাজ্যটিতে মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা বহু বছর ধরেই ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এ দাবির বিরোধিতা করে আসছিল কুকি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁদের অভিযোগ, মেইতেইদের দাবি মেনে নেওয়া হলে তারা পার্বত্য জেলাগুলোতে তাদের পূর্বপুরুষের বনভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে। গতকাল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘মণিপুরের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে মণিপুর সরকার।’ বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মণিপুরে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় কারফিউ জারি করার পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে সহিংসতাকারীদের ‘দেখা মাত্র গুলি’ করার আদেশ জারি করা হয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং রাজ্য সরকারকে এক সপ্তাহ পরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেন, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনো আতঙ্কে আছেন এবং তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের বাসিন্দা এল স্যাংলুন সিমতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা এখনো নিরাপদ বোধ করছি না। এদিকে গত রোববার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ৯৬ ঘণ্টার অক্লান্ত চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। এখন সবকিছু শান্ত রয়েছে। তবে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনো উত্তেজনা রয়েছে। যেকোনো সময় নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সংঘাতকারীরা সেনা সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজারেরও বেশি বন্দুক ছিনিয়ে নিয়েছে। সেখান থেকে ২০০টি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্রগুলো থানায় জমা না দিলে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হবে। মণিপুর ভারতের প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বের একটি অঞ্চল। এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ লেগে আছে। উত্তর-পূর্বে কয়েক ডজন উপজাতি গোষ্ঠী ও ছোট গেরিলা বাহিনী রয়েছে। এদের দাবি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত।  ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে মণিপুরে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংঘাতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবে অনেক গোষ্ঠী দিল্লির সঙ্গে ক্ষমতার জন্য নানা চুক্তিতে আসার গত কয়েক বছরে এসব বিরোধ কমেছে। awesome)

About admin

Check Also

আটকে গেছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১ কোটি ৪১ লাখ ডলার

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১ কোটি ৪১ লাখ ডলার অর্থ আটকা পড়েছে। বাংলাদেশি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *