এক আমের দাম ২৫ হাজার টাকা, যেভাবে চাষ করছেন চাষি

জাপানের হোক্কাইদো দ্বীপের ওতোফুকের বাসিন্দা হিরোইউকি নাকাগাওয়া। তিনি কুয়াশাচ্ছন্ন গ্রিনহাউসের ভেতরে পাকা আম তুলছিলেন রপ্তানির উদ্দেশ্যে। ডিসেম্বরের জাপানে বাইরে তাপমাত্রা তখন মাইনাস ৮ ডিগ্রি। তবে গ্রিনহাউসের ভেতরে ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।নাকাগাওয়া ২০১১ সাল থেকে জাপানের সবচেয়ে উত্তরের দ্বীপের তুষারময় অঞ্চল টোকাচতে আম চাষ করে আসছেন। তিনি টেকসই আম চাষাবাদের পরীক্ষা পরীক্ষা হিসেবে এটি শুরু করেন। নাকাগাওয়া কখনই ভাবেননি এই পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা একদিন বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম উৎপাদন করবে। এখন তিনি এসব আম প্রতি পিস প্রায় ২৫ হাজার টাকায় (২৩০ ডলার) বিক্রি করেন।৬২ বছর বয়সী নাকাগাওয়ার আগে একটি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ছিল। তিনি বলেন, ‘প্রথমে কেউ আমাকে গুরুত্ব দেয়নি। এই কনকনে ঠান্ডা প্রকৃতির হোক্কাইদো থেকে আমি গরমের ফল আম চাষ করতে চেয়েছিলাম।’নাকাগাওয়া তেল ব্যবসার কয়েক বছর পর আম চাষ শুরু করেন। তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি ও বাজারের অস্থিতিশীলতা তাঁকে পেশা পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবিয়ে তোলে। এ সময় দক্ষিণ মিয়াজাকির আরেক আম চাষি নাকাগাওয়া তাঁকে জানান, প্রচণ্ড শীতেও আম চাষ করা সম্ভব। তাঁর নির্দেশনায় নাকাগাওয়া খামার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কয়েক বছর পরে তিনি তার আমের ব্র্যান্ড নাম দেন ‘হাকুগিন নো তাইয়ো’ অর্থাৎ ‘তুষার মাঝে সূর্য’।নাকাগাওয়ার রহস্য হল তার মাতৃভূমি হোক্কাইদোর দুটি প্রাকৃতিক উপাদানকে চাষাবাদে ব্যবহার করা। তা হলো—হোক্কাইদোর তুষারপাত ও বসন্তের উষ্ণ আবহাওয়া। তিনি শীতকালে তুষার সঞ্চয় করেন এবং গ্রীষ্মকালে এসব গ্রিনহাউসকে ঠান্ডা করতে ব্যবহার করেন। এতে আম গাছে মুকুল আসতে বিলম্ব হয়। তারপর শীতকালে তিনি গ্রিনহাউস গরম করার জন্য প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ ব্যবহার করেন এবং অসময়ে প্রায় ৫ হাজার আম সংগ্রহ করেন।প্রক্রিয়াটি কনকনে ঠান্ডার মাসগুলোতে আম পাকতে সাহায্য করে। এ সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব থাকে না। অর্থাৎ কীটনাশকও লাগে না। হোক্কাইদোর স্বল্প আর্দ্রতার আবহাওয়া ছাঁচ অপসারণকারী রাসায়নিকের প্রয়োজনীয়তাও কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া শীতকালে আম তোলার জন্য সহজেই শ্রমিক পাওয়া যায়। কেননা এ সময় অসংখ্য কৃষক বেকার বসে থাকেন।এই টেকসই পদ্ধতিতে চাষ করা আম স্বাদে আনে এক ভিন্নতা। নাকাগাওয়ার দাবি, এই আমে সাধারণ আমের তুলনায় প্রায় ১৫ গুন বেশি চিনি রয়েছে এবং এটি মাখনের মতো মসৃণ। আঁশ নেই বললেই চলে।এসব আম উৎপাদনের অভিনব উপায় গ্রাহক এবং খুচরা বিক্রেতাদের আগ্রহী করে তুলেছে। ২০১৪ সালে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইসেটান নাকাগাওয়ার একটি আম টোকিওর শিনজুকুকে প্রদর্শন করেছিল। তখন ওই আম প্রায় ৪০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এক আমের এমন চক্ষু চড়কগাছ দাম খবরের শিরোনামও হয়েছিল।এরপর থেকে এস আম আরও ভোক্তার নজর কেড়েছে এবং দিনদিন এটি দুর্লভ পণ্য হয়ে উঠছে। যেই অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভোক্তারা নাকাগাওয়ার আম অর্ডার করতে পারেন, সেখানে প্রায়ই গাঢ় লাল ফন্টে ‘সোল্ড আউট’ লেখা থাকে।নাকাগাওয়ার ক্রেতা ও রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০২২ সালের এশিয়ার সেরা মহিলা শেফ নাটসুকু শোজির মতো ব্যক্তি। যিনি আমের মুকুলের কেক বানাতে এসব আম ব্যবহার করে থাকেন। বিদেশেও তার গ্রাহক রয়েছে যেমন: হংকংয়ের উচ্চমানের রেস্টুরেন্ট সিটি সুপার।শীতকালে আম চাষ নাকাগাওয়ার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। একটি আম গাছে হাত বুলাতে বুলাতে নাকাগাওয়া বলেন, ‘যেহেতু আমরা কীটনাশক ব্যবহার করি না, তাই চা কোম্পানি ‘লুপিসিয়া’ আমের চায়ের জন্য আমাদের পাতা ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে।’নাকাগাওয়া এখনো সন্তুষ্ট নন। তিনি একই পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল শীতকালে উৎপাদন করতে চান। তাঁর লক্ষ্য টোকাচিকে ফল উৎপাদন কেন্দ্রে (হাব) পরিণত করা এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা।এরপরে তিনি আরও একটি রসালো ফলের দিকে নজর দিচ্ছেন যা উষ্ণ আবহাওয়ায় সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য পরিচিত। নাকাগাওয়া বলেন, ‘আমি আম পছন্দ করি, কিন্তু পীচ আরও বেশি পছন্দ করি।’ Great)

About admin

Check Also

https://www.ajkerpatrika.com/277196/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0

amazing)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *