গ্রামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় হয় অনেক পরে, মূলত শিলাইদহ আসার পর। এবং তখনই রবীন্দ্রনাথ দেশটাকে চিনতে পারেন। কিন্তু নিন্দুকেরা তাঁর সম্পর্কে নানা বানানো কথা বলে বেড়াত।জীবনের শেষদিকে একবার বেড়াতে গিয়েছিলেন মংপুতে, মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে। তখন একদিন আক্ষেপ করে মৈত্রেয়ীকে বলছিলেন, ‘আচ্ছা কেন তোমরা বল যে আমি কল্পরাজ্যের কবি, দেশের মাটির দিকে আমার দৃষ্টি নেই। বাংলা দেশের গ্রাম আমি জানিনে, দরিদ্র সাধারণ বাঙালি জীবন জানিনে আমি, সে ছবি আঁকিনি? খালি কবিত্ব করেছি অ্যারিস্টোক্র্যাটিক মেজাজে, আর সত্যিকারের দরদ দিয়ে বাঙালির জীবন ফুটিয়েছেন–অমুক বাবু!’ রবীন্দ্রনাথের মুখে এ কথা শুনে খুবই অবাক হলেন মৈত্রেয়ী দেবী। বললেন, ‘কে আবার বলে এ কথা?’ ‘কেন, তুমি এসব শোনোনি?’এবার ফোড়ন কাটলেন মৈত্রেয়ী, ‘না, আপনার নিন্দুকদের সঙ্গে আমার গলাগলি বন্ধুত্ব নেই তো!’ ‘নেই? হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম।’এরপর আরও কী নিয়ে নিন্দা করা হয় রবীন্দ্রনাথকে, সেটাও কবি খোলাসা করলেন, ‘কে একজন বলছিল, সে শুনেছে সুন্দরী মেয়ে ছাড়া আমি কাউকে কাছে আসতে দিই নে। আহা! শুনে রোমাঞ্চ হয়। এ ব্যবস্থা করতে পারলে মন্দ হতো না। শান্তিনিকেতন তাহলে স্ত্রী-জাতি শূন্য হতো। আর নিশ্চয় যারা এ কথা বলে, তারা তোমায় দেখেনি। তোমার কী গতি হতো তাহলে?’ মৈত্রেয়ী বললেন, ‘কী অপমান! কেবল বয়স আর চেহারা নিয়ে এ অপমান সহ্য হয় না।’রবীন্দ্রনাথ প্রবোধ দিলেন, ‘না না, বয়স নিয়ে তো আমি কিছু বলিনে। আমি তো স্পষ্টই জানি, তোমার বয়স পঁয়তাল্লিশের একটুও বেশি নয়!’রবীন্দ্রনাথ যে কী রসিক ছিলেন, তা এ কথাতেই বোঝা যায়। মৈত্রেয়ী দেবীর বয়স তখন মাত্র পঁচিশ, কিন্তু কবি সে বয়সটাকে নিয়ে গেলেন একেবারে পঁয়তাল্লিশে! সূত্র: মৈত্রেয়ী দেবী, মংপুতে রবীন্দ্রনাথ. পৃষ্ঠা ১৬৩–১৬৪ awesome)
Check Also
কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির অস্বাভাবিক মৃত্যু
রাজধানীর বংশালে নিমতলি এলাকার একটি বাসায় ওয়াসিম রানা (২৯) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু …