রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে তরুণ চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীকে প্রকাশ্য দিবালোকে বাসার সবার সামনে থেকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল সিআইডি। আটক করার সময় তারা নিজেদের সিআইডি’র সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছিল। অথচ, দুই দিন পার হয়ে গেছে। এখনো অস্বীকার করছে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইডি। আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করা এই তরুণ ডাক্তারের পিতা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ কে এম ওয়ালীউল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, সিআইডি পরিচয় দিয়ে ছেলেকে বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গত রোববারের পর থেকে কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। তিনি আরো জানিয়েছেন আটক করে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর সিআইডি’র সদস্যরা আবারো এসেছিল বাসায় তল্লাশি করতে। তারা ছেলের রুম তল্লাশি করে মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রবীণ এই চিকিৎসক জানান, আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার ছেলের কোনো সন্ধান আর পান নি তারা।ডাঃ এ কে এম ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছেলে শিক্ষাজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিল। ২০১৮-১৯ সালের দিকে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করেছি। ১ মাস পর আদালত থেকে জামিনে বের হয়েছিল। এখন সে আর কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।’
তিনি আরও বলেন, গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) ডা.শাকির বিন ওয়ালীকে বাসা থেকে সিভিল ড্রেসে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই সিআইডির লোকেরা ধরে নিয়ে যায়।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাঃ এ কে এম ওয়ালী উল্লাহ ছেলেকে আটক এবং গুম করার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত রোববার বিকাল তিনটার দিকে সিআইডি পরিচয়ে সিভিল পোশাকে চারজন ব্যক্তি আমার বাসায় প্রবেশ করেন। আমি তখন পেশাগত কাজে বাইরে ছিলাম। বাসায় ছিলাম না। শুধু আমার স্ত্রী, কন্যা ও পুত্রবধূ বাসায় ছিল। তারা পরিচয় জানতে চাইলে জানায় সিআইডি। আমার দ্বিতীয় সন্তান সদ্য পাশ করা এমবিবিএস ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিল তখন।
তিনি বলেন, ১১ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টার দিকে যখন আমার ছেলেকে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আশপাশের সবাই তা দেখেছেন।গুমের ব্যাপারে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ডা. শাকিরের পরিবার থেকে জিডি করতে থানায় এসেছিল। আমরা তাদের বক্তব্য নোট নিয়েছি। খোঁজ নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ডা. শাকির বিন ওয়ালীকে বাসা থেকে তুলে নেয়ার পরদিন সোমবার (১২ই সেপ্টেম্বর) সকালে মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তার পিতা ডাঃ এ কে এম ওয়ালী উল্লাহ। সেখান থেকে রামপুরা থানায় যাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মাওলার তাঁকে (ডাঃ এ কে এম ওয়ালী উল্লাহ) বলেন, উনি (তদন্ত কর্মকর্তা) নিশ্চিত যে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর (ডাঃ এ কে এম ওয়ালী উল্লাহ) ছেলেকে নিয়ে গেছে। তাই জিডি নথিভুক্ত করা সম্ভব নয়।
অথচ আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) আজাদ রহমান বলেন, এই নামে (ডাঃ শাকির বিন ওয়ালী) কাউকে তুলে আনা হয়নি।
অর্থাৎ প্রকাশ্য দিবালোকে তুলে নেয়ার পর এখন অস্বীকার করছে সিআইডি।
ভুক্তভোগী ডাঃ শাকির বিন ওয়ালীর পরিবারের সদস্যরা জানান, আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করলেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে এর সাথে সরকারের সংস্থাগুলোই জড়িত