বেতন দিতে না পারায় ছাত্রীর গলার চেইন খুলে নিলেন অধ্যক্ষ!

অধ্যক্ষের অপমানের লজ্জায় ৬ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় না ঢাকার ধামরাইয়ের সুয়াপুর-নান্নার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা আক্তার।

বকেয়া মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় অধ্যক্ষ আনোয়ারুল তালুকদার ওই ছাত্রীর গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট খুলে নেওয়ার ঘটনায় ওই ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বকেয়া মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি প্রদান করার পরও অধ্যক্ষ ওই ছাত্রীর গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট ফেরত দেননি। এ অভিযোগ ভুক্তভোগী ছাত্রী ও পরিবারের সদস্যদের।

ঘটনাটি বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে জানান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ও পরিবারের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুয়াপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো. নজরুল ইসলামের মেয়ে সুবর্ণা আক্তার মুয়াপুর-নান্নার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার দারিদ্র্যতার কারণে তার মাসিক বেতন বাবদ ৭৯০ টাকা বকেয়া পড়েছে। বকেয়া মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ২৫০ টাকা ফি পরিশোধ করতে না পরায় তাকে ষাণ্মাসিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গেলে শ্রেণি শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, পরীক্ষা দিতে হলে অধ্যক্ষের অনুমতি লাগবে।

এরপর মা ও সহপাঠীদের নিয়ে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আনোয়ারুল তালুকদারের দ্বারস্থ হয় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এরপর ওই অধ্যক্ষ মা ও সহপাঠীদের সামনেই ওই ছাত্রীর গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট খুলে রেখে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন। ওই ছাত্রীর বাবা পরদিনই মেয়ের বকেয়া মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি প্রদান করার পরও অধ্যক্ষ তার গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট ফেরত দেননি বলে ভুক্তভোগী ওই পরিবারের অভিযোগ।

এ অপমানের লজ্জায় ওই ছাত্রী ২৬ আগস্ট থেকে আর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না। অথচ এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থী তার কোনো খোঁজখবর পর্যন্ত নেননি বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানায়, আমার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। তিনি অসুস্থতার কারণে আমার স্কুলের বেতন যথাসময়ে দিতে পারেননি। তাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অধ্যক্ষ স্যারকে অনেক অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি আমার মা ও সহপাঠীসহ সবার সামনে আমাকে চরমভাবে অপমান অপদস্থ করে আমার গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট খুলে রেখে লিখিত অনুমতি দেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য।

ওই ছাত্রী বলে- আমার বাবা পরদিনই বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি প্রদান করার পরও তিনি আমার গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট ফেরত দেননি।

অধ্যক্ষ আনোয়ারুল তালুকদার বলেন, বকেয়া মাসিক মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফিয়ের জন্য গলার চেইন ও হাতের ব্রেসলেট রাখা হয়নি। নিষেধ করার পরও ঠোঁটে লিপস্টিক ও অর্নামেন্ট পরিধান করে সেজেগুজে স্কুলে আসার কারণে তার গহনা খুলে রাখা হয়েছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে আমি বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফিয়ের জন্য এসব রেখেছি। এটা মিথ্যা ও আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার মাত্র।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আশরাফী বলেন, গহনা পড়ে লিপস্টিক দিয়ে সাজগোজ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা যাবে না এমন কোনো সরকারি বিধান নেই। আর সেজন্য ছাত্রীর গহনা খুলে রাখা ঠিক নয়। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

About admin

Check Also

আমি কি দুর্নীতি করেছি, আপনারা বলেন: পাপন

‘বিএনপি এখনো শুধু মিথ্যাচার করে চলেছে। আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করেন দেশে কি দুর্নীতি হয়েছে? ভৈরব, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *