জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে রাখাই ভালো ছিল: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনুমান করা খুব কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে রাখাই ভালো ছিল। সামনে কী হবে, জানি না। পাঁচ টাকা কমানো হলো। এটা কত দিন থাকবে কে জানে।
আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দাম বাড়ানোর সময়ে শুল্ক কমানো হলে এখন আর কমানোর প্রয়োজন হতো না এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) শুল্ক-কর উঠিয়ে দিলে জ্বালানি তেলের দাম কমবে। কিন্তু এনবিআর রাজস্ব কোথায় পাবে। রাজস্ব না পেলে উন্নয়ন কীভাবে হবে। শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোটা ফিজিবল (লাভজনক) না–ও হতে পারে।

শিগগিরই জ্বালানি তেলের দাম আরও কমার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আর দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কিছু বলা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, মাত্র ৪ শতাংশ দাম কমার প্রভাব অনুভব করা কঠিন। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে মূলত আমদানি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার কারণে।
তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে আইএমএফের শর্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশও আইএমএফের মালিক। ঋণ নিয়ে আলোচনা ভালো। তবে দাম বাড়াতে তাদের শর্তের কোনো বিষয় নেই। সরকারের কৃচ্ছ্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সব দেশই করছে। সংসারে টানাপোড়েন হলেও খরচ কমাবে। এটি মানুষের বেলায় যেমন সত্য, সমাজের বেলায়ও তেমন সত্য।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করবে না বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোহে ডব্লিউ ফারনান্দেজের কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এ হিসেবে রাশিয়া বা অন্য উৎস থেকে তেল আমদানি করা হলে তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে রাশিয়া কম দামে তেলে দেবে, তা জানা যায়নি। তাই তাদের তেল এলেই জ্বালানি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এটা বলা যাচ্ছে না।

এর আগে গত জুলাইয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেশে লোডশেডিং কমার কথা জানিয়েছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা। এ বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের জায়গায় অক্টোবর হলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। কিছুদিন আরও সময় লাগতে পারে, এক বা দুই মাস। গরম কমে গেলে এবং কয়লাভিত্তিক বড় প্রকল্প উৎপাদনে এলে লোডশেডিং কমবে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি খাতের সমস্যা বৈশ্বিক। দেশের কোনো কোনো পক্ষ, কিছু গণমাধ্যম এটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানির দাম কমে গেলে বাংলাদেশের আর কোনো সমস্যাই থাকত না। এখন যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে।

দেশের গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কিনে নেয়া পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের পর বিবিয়ানা ও জালালাবাদ ছাড়া দেশে আবিষ্কৃত ১৯টি গ্যাসক্ষেত্রের মজুত পাঁচ টিসিএফ। এগুলো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্যাসক্ষেত্র। অনুসন্ধান ঠিকই করা হয়েছে। স্থলভাগে আপাতত নিজস্ব সামর্থ্য ব্যবহার করেই গ্যাস অনুসন্ধান করা হবে। আর সমুদ্রে বিদেশি কোম্পানিকে আহবান জানানো হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

About admin

Check Also

আমি কি দুর্নীতি করেছি, আপনারা বলেন: পাপন

‘বিএনপি এখনো শুধু মিথ্যাচার করে চলেছে। আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করেন দেশে কি দুর্নীতি হয়েছে? ভৈরব, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *